প্রথমেই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করুন:
সম্প্রতি বিদেশে পড়তে গেছেন সায়মা চৌধুরী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে ঠিক করতে হবে তিনি কোন দেশে পড়তে যেতে চান। কারণ একেকটি দেশের পড়াশোনা, খরচ, ভর্তি চাহিদায় পার্থক্য আছে। দেশ বাছাইয়ের পরে ঠিক করতে হবে যে, আমার সাবজেক্ট ও আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যেতে পারে। এক্ষেত্রেও একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা চাহিদা, টিউশন ফির সঙ্গে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য থাকে’।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আঞ্চলিক সমন্বয়ক তাওসিফ মান্নান খান বলছেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে সেপ্টেম্বরে ভর্তি সেশন শুরু হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অন্তত এক বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত। বিশেষ করে ইংরেজির ভর্তি চাহিদা যেমন, আইইএলটিএস বা অন্যান্য চাহিদা প্রস্তুতি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ, আবেদন ইত্যাদি অন্তত একবছর আগে থেকে শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, যে বিষয়ে পড়তে চান, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে আপনার আর্থিক সামর্থ্য এবং পছন্দের সঙ্গে মিলছে কিনা।
শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্যের স্ট্যাফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রস্তুতি দরকার হবে
ভাষা দক্ষতার প্রমাণ :
যেমন আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট অথবা জিআরই। একেকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসব চাহিদার পার্থক্য থাকতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা দরকার। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে বেশিও চাইতে পারে। তবে আমেরিকাসহ আরো দেশের কোন কোন সাবজেক্টে টোফেল, স্যাট বা জিআরই দরকার হতে পারে।
জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ের মতো ইউরোপীয় দেশে পড়তে গেলে যেমন ইংরেজিতে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশের ভাষার দক্ষতা দরকার হতে পারে। বিশেষ করে জার্মানির মতো দেশে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ নিতে হলে জার্মান ভাষা জানতে হবে।
পড়াশোনার ফলাফল :
বাংলাদেশে পড়াশোনার ফলাফলের ওপর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বিষয়ে ভর্তির ব্যাপারটিও অনেক সময় নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেইল করেও পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ইংরেজি দক্ষতার ব্যান্ডস্কোরও ভর্তি বা বিষয় পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
ভর্তির প্রক্রিয়া :
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বাছাই করার পরে অনলাইনের মাধ্যমে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন ইত্যাদি দেশের কেন্দ্রীয় ভর্তি ব্যবস্থাপনার ওয়েবসাইট আছে। সেখানে আবেদন করলে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বেছে দেয়া হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
সেখানে পড়াশোনার সকল সনদ কাগজপত্র স্ক্যান করে তুলে দিতে হতে পারে। পাশাপাশি এসব সেগুলোর ফটোকপি কুরিয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাতে হতে পারে। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্ত ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলে ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র :
ভিসা আবেদনের সময় আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ দেখাতে হবে। প্রায় সব দেশেই শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে দূতাবাস কর্মকর্তারা দেখতে চাইবেন যে, শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচ সে বহন করতে সক্ষম।
দেশ ভেদে টিউশন ফি হিসাবে অন্তত বছরে অন্তত ১০/১২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২০/২২ লাখ টাকা খরচের সামর্থ্য থাকতে হবে। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, পোশাক, হাতখরচ, চিকিৎসা যোগ করতে হবে। লন্ডনের ক্ষেত্রে যেমন এক্ষেত্রে বছরে আরো অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। এই খরচের টাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিস্টারের ফি অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। অনেক দেশে স্বাস্থ্য বীমা থাকা বাধ্যতামূলক। সেটি অবশ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন বীমা এজেন্সি করে থাকে, যেসব এজেন্সির নাম দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
আবাসন :
সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পূর্বেই জানাতে হবে যে, তারা সেই আবাসন সুবিধা নিতে চান কিনা। অথবা শিক্ষার্থীরা চাইলে নিজেরা আলাদাভাবে বাসা ভাড়া করেও থাকতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত নিজেদের রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
বৃত্তির জন্য আবেদন :
আবেদনের সময় উল্লেখ করতে হবে যে বৃত্তি নিতে চান কিনা। একই সময় বৃত্তির জন্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। ভারত, তুরস্ক, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবেই নানা ধরনের বৃত্তি রয়েছে।
এ রকম বিখ্যাত কয়েকটি বৃত্তি হলো জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বৃত্তি, এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, জার্মানির ডিএএডি, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, শেভেনিং স্কলারশিপ, যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্টস প্রোগ্রাম, কানাডার হাম্বার ইন্টারন্যাশনাল এন্ট্রান্স স্কলারশিপ ইত্যাদি।
যুক্তরাজ্য :
‘যুক্তরাজ্যে যারা স্নাতক বা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়তে যেতে চান, তারা UCAS ওয়েবসাইটের গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত সকল কাজ করতে পারেন। কারণ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তথ্য, আবেদনের প্রক্রিয়াসহ সব তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও সেখানকার ভর্তি তথ্য, খরচ, আবেদনের প্রক্রিয়া ও অনলাইনে আবেদন করা যায়’।